ল্যাপটপ মেরামতে প্রতারক থেকে সাবধান !

ল্যাপটপ মেরামতে প্রতারক থেকে সাবধান !


কতিপয় অসাধু ব্যক্তি কম্পিউটার ও ল্যাপটপ মেরামতের নামে গোটা ল্যাপটপ এবং সেই সাথে অতিরিক্ত নগদ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ল্যাপটপের সামান্য কোন সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে গেলে দেখবেন একটা একটা করে গোটা ল্যাপটপটাই নষ্ট করে ছাড়বে এবং সেগুলো সারানোর নাম করে নিত্য নতুন খরচ দেখিয়ে টাকা খসাতেই থাকবে। মনে করুন, আপনি কেবল ডিসপ্লে সমস্যা নিয়ে তাদের কারো কাছে গেলেন। প্রথমে তারা বলবে, আপনার মনিটর (LCD) ঠিকই আছে, কেবল এসটি কার্ড বা ইনভার্টারটা পাল্টালেই চলবে। খরচ পড়বে মাত্র ১২০০ টাকা। কিন্তু এরপর আপনাকে শোনাবে, আপনার এলসিডিটাও ঠিক নাই, আরো ৪৫০০ টাকা দিয়ে সেটা কিনতে হবে। এদিকে তারা শুরু থেকেই সমস্যা খুজে বের করার নামে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছলে আপনার মাদারবোর্ডের বিভিন্ন স্থানে ওয়েল্ডিং করে জ্বালিয়ে দেবে। এ যেন অনেকটা সেই অসাধু ডাক্তারদের মতোই, যারা ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছলে অনেক অংগ-প্রত্যংগ নষ্ট করে দিয়ে মানুষকে রোগী বানিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিতসার খরচ বাড়িয়ে থাকে। আপনার কাছে মনে হবে, কতই না দক্ষতা, মনোযোগ, একাগ্রতা, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে খেয়ে না খেয়ে নিজের আর সকল কাজ ফেলে রেখে সে আপনার কাজ করে দিচ্ছে! কিন্তু ৬/৭ হাজার টাকা দিয়ে ল্যাপটপ সারিয়ে বাসায় নিয়ে আধ ঘন্টা না চালাতেই টের পাবেন কি মহা সর্বনাশ আপনার হয়ে গেছে। এরপর যখন আবার তাদের কাছে নিয়ে যাবেন, তখন শুনবেন মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে, যার জন্য আরো ১০ হাজার টাকা লাগবে। এবার তারা মাদারবোর্ড কেনার জন্য আপনার কাছ থেকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেবে। কিছুদিন ধরে নাড়াচাড়া ও দৌড়াদৌড়ির নাটক দেখার পর আপনি শুনবেন, এখন আর আপনার ল্যাপটপ সারানোর কোন উপায়ই অবশিষ্ট নেই। (উল্লেখ্য, ল্যাপটপের মাদারবোর্ড একবার নষ্ট হলে আর সেই ল্যাপটপ ঠিক হয় না।) এখন আমরা কেবল একভাবে আপনাকে হেলপ করতে পারি, তাহলো আপনি যদি আপনার ল্যাপটপের সাথে আরো ১৫ হাজার টাকা যোগ করেন, তাহলে এর পরিবর্তে আমরা আপনাকে আরেকটি ল্যাপটপ দিতে পারি, যা গুণে ও মানে আপনারটার চাইতেও হাজারগুণ ভাল। এমতাবস্থায় আপনি যেহেতু ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে ফেলেছেন, সেহেতু তাদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার কোন উপায় আপনার থাকবে না। তারা হয়তো তাদের নতুন প্রদত্ত ল্যাপটপের জন্য ৬ মাসের ওয়ারেন্টিও দিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটা ২ সপ্তাহও টিকবে না। আর তাদের যা চরিত্র, তাতে ওটা নষ্ট হলে আর ফিরে পাবার প্রশ্নই আসে না।
আপনি যদি তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েও নিজের হার্ড ডিস্কটা রাখতে চান, সেটা তারা রাজি হতেও পারে। কিন্তু যদি দেখে যে, তাদের হার্ড ডিস্কের চাইতে আপনার হার্ড ডিস্ক অনেক বেশি মানসম্মত ও কয়েকগুণ বেশি জায়গার অধিকারী, তখন ছলে-বলে-কৌশলে আপনারটাই হাতিয়ে নেবে। উদাহরণসরূপ, তাদেরটার হার্ড ডিস্কে জায়গা যদি হয় মাত্র ৩৭ গেগাবাইট, আর আপনারটাতে থাকে ১৫০ গেগাবাইট, তাহলে তারা কিছুতেই আপনারটাকে হাতছাড়া করতে চাইবে না। এমনকি আপনার হার্ড ডিস্কের ডকুমেন্টগুলো কপি করে দিতেও চুদুর বুদুর করবে। কারণ, আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট যদি কপি করতে যান, তাহলেই ধরা পড়ে যাবে তাদের দেয়া ল্যাপটপের হার্ড ডিস্কে কোন জায়গাই নেই। হয়তো বলবে, আপনার হার্ড ডিস্কটা কোন কারণে এমনভাবে লক হয়ে আছে যে, এক বিশেষ সফটওয়ারের সাহায্যে তা ছাড়াতে হবে এবং এর জন্য আরো দুই দিন সময় লাগবে। এমতাবস্থায় আপনার পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে কপি করে দিতে যদি রাজিও হয়, তথাপি আপনাকে সেখানে হাত দেবার সুযোগ দেবে না, বরং কপি করার কাজটা নিজেদের হাতেই করে দেবে, আর সুযোগ পেলেই Cancel দেবে। আপনি একটু হাত বাড়াতে গেলেই এমন ভাব দেখাবে যে, আপনি যেন খুব আনাড়ি মানুষ এবং দুনিয়ার যত ভাইরাস সব ঢুকিয়ে ফেলছেন! আপনাকে উপদেশ দেবে, কেবল জরুরী ডকুমেন্টগুলোই নিয়ে যান, সব ডকুমেন্ট কপি করতে গিয়ে সময় নষ্ট করার দরকার কি? ভিডিওগুলোকে অপ্রয়োজনীয় আর সফটওয়ারগুলোকে ক্ষতিকর সাব্যস্ত করবে। ভিডিও কপি করার কাজটাও এমনভাবে করবে যে, কেবল প্রথমদিকের ও শেষেরদিকের গুলো দেবে, যাতে এক নজরে দেখলে মনে হবে মোটামুটি সবগুলোই এসেছে। কিন্তু বাসায় আসার পর দেখবেন, আপনার মোট ভিডিও ফাইলগুলোর দশ ভাগের একভাগও পাননি। আপনাকে প্রভাবিত করার জন্য এই খল প্রতারকরা নানা ধরনের পাণ্ডিত্যপূর্ণ নসীহত শোনাবে। বলবে, সফটওয়ার ও জরুরী ডকুমেন্ট কখনো হার্ড ডিস্কে রাখতে নেই, হার্ড ডিস্কের আর ভরসা কি? জরুরী সব জিনিস সব সময় ডিভিডিতে রাখবেন, ইত্যাদি।
ডকুমেন্টসহ আপনার মূল্যবান হার্ড ডিস্কটা আটকে রাখার দ্বারা তারা আপনার সাথে ভবিষ্যত দরকষাকষির একটা অস্ত্রও হাতে পাবে। পরবর্তীতে আপনি হয়তো বড়জোর তাদের দেয়া নিম্নমানের কম্পিউটারটি ফেরত দিয়ে নিজের হার্ড ডিস্কটি ফেরত পেতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, যে টাকা ও আপনার সাবেক কম্পিউটার একবার তাদের হাতে দিয়েছেন, তার একটা কানাকড়িও আর ফেরত পাবেন না। অবশ্য আপনি যদি প্রভাবশালী কোন রাব আংকেলের ভাতিজা বা ভাগিনা হয়ে থাকেন, তাহলে চেষ্টা করার সুযোগ পেলেও পেতে পারেন।
এবার আমি দু’জন প্রতারকের নাম উল্লেখ করছি; একজনের নাম সবুজ, যিনি এলিফ্যান্ট রোডস্থ সুভাস্তু আর্কেডের চতুর্থ তলায় AVI Com Technology নামক দোকানে কম্পিউটার মেরামতের কাজ করেন ও পুরাতন কম্পিউটার পার্টস কেনাবেচা করেন। আপরজন হলেন হোসেইন আলী চঞ্চল, যিনি মূলত একজন দালাল টাইপের লোক, নিজে কোন মেরামতের কাজ করেন না। কম্পিউটার মেরামতের পাশাপাশি তিনি গার্মেন্টসের বায়িং ব্যবসার সাথেও জড়িত। তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কাজ করেন বলেও দাবি করেন। চঞ্চল সাহেবের খপ্পরে একবার কেউ যদি পড়েন, মনে হবে সুযোগ পেলে যেন আপনার কিডনিটাও রেখে দেবে। চঞ্চল সাহেবের নিজস্ব কোন স্থায়ী অফিস নেই, নিজের বাড়িতে যেতেও কাউকে উতসাহিত করেন না, তবে অধিকাংশ সময় তিনি তার পার্টনারের অফিস পরিচয়ে যে অফিসটি ব্যবহার করেন, সেটা পান্থপথ সিগনালের কাছে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের পাশে একটা বিল্ডিংয়ের চতুর্থ বা পঞ্চম তলায় একটা কোচিং সেন্টার টাইপের ছোটখাট একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এলিফ্যান্ট রোড থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ও পান্থপথ সম্ভবত তার বিচরণক্ষেত্র।
Share this post :

Post a Comment

Blog Archive

 
Support : Creating Website | N Hassan | Winter Hassan
Copyright © 2013. BD World 21 - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Online World