অনলাইনে এবং অফলাইনে নারী!

কিছু ব্যাপার প্রায়ই দগ্ধ করে। তবুও অনেক সময়ই মুখ বুজে সয়ে যাই। কখনো কখনো প্রতিবাদও হয়ত করি। কিন্তু পরিস্থিতি যেইকার সেই! মনে হয় কেউ যেন শক্ত করে টেনে চেপে ধরেছে আমাদের মানুষ হবার লাগাম! এই যেমন কয়েক দিন আগের ঘটনা। আমার এক বান্ধবী ফেসবুকের একটি পেজের ছবিতে কমেন্ট করে। তারপর দেখলাম যে তার কমেন্ট প্রায় ডজনখানেক লোক লাইক দেয়। আর কয়েকজন লোক কমেন্টের রিপ্লাই দেয়। উল্লেখ্য তার মধ্যে কয়েকজন ঠিক এমন কমেন্ট দেয় ,”হাই আপি,কেমন আছেন?”, কেউ আবার লিখেছে ,”তুমি খুব সুন্দর”, আর কেউ কেউ দেখলাম একদম অযথা কিছু অশোভন কথা লিখেছে! খুব অবাক হচ্ছিলাম তার উপর এই অযাচিত আক্রমণ দেখে। উল্লেখ্য সেটা কোন তর্ক করার মত বিষয়ও ছিল না। খুব সাধারণ একটা মন্তব্য। এমন মন্তব্য আরো কয়েকটা ছেলেও দিয়েছে। কিন্তু তাদের মন্তব্য নিয়ে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, গুটি কয়েক লোকের শুধু মাত্র আমার বান্ধবীর কমেন্ট নিয়ে মাথা ব্যথা! তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা বুঝলাম- আমার বান্ধবীর প্রফাইল পিকচারটি খুব সুন্দর। হিজাব পরিহিতা খুব মিস্তি চেহারার মেয়ে সে। এই মিষ্টি চেহারাই তার অপমানের মূল কারণ। যে সব ছেলে ইভটিজিং এর মানসিকতা নিয়ে বড় হয় তারাই মূলত মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই সব হীন পন্থাগুলো অবলম্বন করে। ব্যাপারটি বুঝাতে আরেকটি উদাহরণ টানছি। কিছুদিন আগে ফেসবুকে বাংলাদেশের বর্তমানের খুবই আলোচিত এক মডেল কন্যা(আমি নাম বলতে চাচ্ছি না) কে নিয়ে একটা পেজ দেখলাম। উল্লেখ্য পেজটি খোলার কিছু দিনের মধ্যেই তাতে ফেন সংখ্যা প্রায় চার হাজারের মত হয়ে যায়! সেই পেজে নিয়মিত উক্ত মডেল কন্যাকে নিয়ে সেই রকম বাজে পোষ্ট আপডেট করার হয় এবং তাতে লাইক সংখ্যাও দেখার মত। আমি জাস্ট কৌতুহল বশত দেখছিলাম কারা এত নোংরা ভাষা সম্বলিত পোষ্টে লাইক দিতে পারে! দেখতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম এদের মধ্যে অনেকের চেহারাতেই সুশীলতার ছাপ! এই হল মুখোশের অন্তরালে আমাদের চেহারা!
যা হোক আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল- ধরে নিলাম আলোচনার খাতিরে ঐ মেয়ে ভালো মেয়ে নয়। কিন্ত ঐ পেজের এডমিন তো ভদ্র ঘরের সন্তান, সে কি করে এমন পোষ্ট দিতে পারে ,”যারা এই মেয়েকে ভোগ করতে চান ,তারা স্ট্যাটাসে লাইক দিন!” (উল্লেখ্য তার পোষ্টে ‘ভোগ’ লেখা ছিল না। একটি ‘চ’ বর্গীয় গালি লেখা ছিল। শ্রুতিকটু হয় বিধায় আমি ‘ভোগ’ লিখেছি।) তার যদি কোন কারণে ঐ মেয়ের সাথে শত্রুতা থেকে থাকে, তবে সে অন্য ভাষা ইউজ করতে পারতো, কিন্তু সে যে ভাষা ইউজ করেছে তাতে তো মূলত ঐ মেয়ের প্রতি তার মনের সুপ্তকামনাই প্রকাশ পায়। এবং এটা বুঝতে বাকি থাকে না সে সেই কামনার প্রবৃত্তি মেটাতেই এত নোংরা পন্থা অবলম্বন করেছে। এরা মুলত পারভারটেড চিন্তার লোক। আশংকার বিষয় হল এমন চিন্তার লোকের সংখ্যা আমাদের সমাজে আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে এবং নারীরা হচ্ছে লাঞ্ছিত।
আজকে একুশে টিভির খবরে শুনলাম-কুষ্টিয়ার একজন শিক্ষক ১৫০ জন ছাত্রী ধর্ষণ করেছে এবং তার কিছু ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোডও করেছে। নিজের নগ্ন ভিডিও অন্যের মোবাইলে দেখে ১১ জন ছাত্রী আত্মহত্যার এটেম্ট পর্যন্ত নেয়! ভাবছিলাম কোন পাপে তারা পাপী? কেন জীবনের শুরু হতে না হতেই তারা জীবন শেষ করে দিতে চাইছে? তারা তো কোন পাপ করে নি। পাপ করেছে ঐ নরপশু শিক্ষক। কই ঐ জানোয়ার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে তো শোনা যায় নি।
আসলে আমাদের সমাজে মেয়েদের উপর নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গী অনেক আগে থেকেই। বিভিন্ন কুচিন্তার দোহাই দিয়ে কোন অপরাধ না করেও নারীই হচ্ছে পাপী! আর বর্তমানে অবস্থা আরো প্রকট। কয়েক বছর আগে একজন আলোচিত মডেলের ভিডিও স্ক্যান্ডেল ফাঁস হবার পর কুচক্রী মোহল শিখেছে নারী নির্যাতনের নতুন পদ্ধতিতে! যে কোন ভাবেই হোক মেয়েদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডি, ছবি ধারণ করে চলে ব্ল্যাকমেইলিং! কখনো তারা ছবি এডিটিং এর মত নোংরা পদ্ধতিও তারা বেছে নেয়! এখন সুস্থ বিবেক সম্পূর্ণ মানুষেরা বলুন কি করে বাঁচবে আমাদের সমাজের কোমলমতিরা?
সামান্য প্রেমে ব্যর্থতার জন্য একটি মেয়ের বাঁচাকে দুর্বিষহ করে তুলতে বাঁধে না আমাদের সমাজের মানুষরুপী কিছু ভয়ংকর জীবের! তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নারী নির্যাতনের কঠোর শাস্তির বিধান থাকা উচিত এবং দরকার এর ব্যাপক প্রচার। অনলাইনে কোন মেয়ের বাজে ছবি বা ভিডিও আপলোডকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা উচিত। যেন পরিমল বা কুষ্টিয়ার নরপশু শিক্ষকের মত লোকের সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই ওদের মুন্ডুপাত করা যায়।
Related Topics: online, offline, life, life style, love, marriage, কর্মক্ষেত্রে, জীবন, জীবনধারা, ভালোবাসার, বিয়ে
Share this post :

Post a Comment

Blog Archive

 
Support : Creating Website | N Hassan | Winter Hassan
Copyright © 2013. BD World 21 - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Online World